অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে চলতি মাসেই দেশে আসছে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে উৎপাদিত করোনা ভ্যাকসিন। প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ হিসেবে ছয় মাসে এই ভ্যাকসিনের তিন কোটি বা তার বেশি পরিমাণ ডোজ ক্রয় করা হবে।
চলতি মাসের ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে ভ্যাকসিনের প্রথম চালান দেশে আসবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইন নিবন্ধন, ভ্যাকসিন কার্ড, সম্মতিপত্র, ভ্যাকসিন সনদ প্রদানে আইসিটি বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতর সুরক্ষা ওয়েবসাইট প্রস্তুত করছে। ভ্যাকসিন পরিবহন, সংরক্ষণ ও প্রদানের সময় যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের পুলিশ বাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে।
সোমবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন ভবনে করোনা ভ্যাকসিন সম্পর্কিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অধিদফতরের টিকা বিতরণ কর্মসূচি কমিটির সদস্য অধ্যাপক শামসুল হক।
প্রথম ধাপে দেশের মোট জনসংখ্যার আট দশমিক ৬৮ শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ৫০ লাখ জনগোষ্ঠীকে তালিকাভুক্ত জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজারি গ্রুপের নির্দেশনা ও দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে করোনা ভ্যাকসিন প্রদানের অগ্রাধিকার নির্ধারণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রথম পর্যায়ে কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যসেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত সব সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী (চার লাখ ৫২ হাজার ২৭ জন), কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যসেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত সব বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী (ছয় লাখ), বীর মুক্তিযোদ্ধা (দুই লাখ ১০ হাজার), সম্মুখসারির আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (দুই লাখ ৭৩ হাজার ৩১০ জন), সামরিক ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী ( এক লাখ ৮০ হাজার ৪৫৭ জন), রাষ্ট্রপরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী (২৫ হাজার ), সম্মুখসারির গণমাধ্যম কর্মী (২৫ হাজার), নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি (৮৯ হাজার ১৪৯), সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সম্মুখসারির কর্মচারী (৭৫ হাজার), মৃতদেহ সৎকার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি (৩৭ হাজার ৫০০), জরুরি পানি, গ্যাস, পয়োনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিস, পরিবহন কর্মচারী (দুই লাখ), স্থল, নৌ ও বিমানবন্দর কর্মী (৭৫ হাজার), প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক (৬০ হাজার), জেলা ও উপজেলা সমূহের জরুরি জনসেবায় সম্পৃক্ত সরকারি কর্মচারী (দুই লাখ), বয়স্ক জনগোষ্ঠী (৮০ বছরের বেশি বা সমান (১৩ লাখ ১২ হাজার ৯৭৩), বয়স্ক জনগোষ্ঠী ৭৭ থেকে ৭৯ বছর (১১ লাখ ৩ হাজার ৬৫৩), জাতীয় দলের খেলোয়াড় (ফুটবল, ক্রিকেট, হকি ইত্যাদি) (১০ হাজার ৯৩২) এবং বাফার ইমার্জেন্সি আউটব্রেক (৭০ হাজার) -কে প্রথম দফায় টিকা প্রদান করা হবে।
প্রথম দফায় ৫০ লাখ করোনা ভ্যাকসিনের টিকা প্রদানে কাজ করবেন সাত হাজার ৩৪৪ সদস্যের ভ্যাকসিন দল। প্রতিটি দলে ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য দুজন নার্স, সাকমো/পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা এবং তাদের সঙ্গে চারজন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। রাজধানীসহ সারাদেশে ভ্যাকসিনেশন সেন্টারে তারা কাজ করবেন।
করোনা ভ্যাকসিন ৬৪ জেলা ইপিআই স্টোর এবং ৪৮৩টি উপজেলা ইপিআই স্টোরে সংরক্ষণ করা হবে। কোভিড ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য আলাদা স্থান নির্ধারণ করে যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য দেশের সব জেলা ও সিটি করপোরেশনের ইপিআই স্টোরসমূহকে ইতোমধ্যেই নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে জাতীয় পর্যায়ে কোল্ড চেন ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিএডিসি ও অন্যান্য জায়গা থেকে কোল্ড রুম ভাড়া নেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা সদর হাসপাতাল, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, পুলিশ, বিজিবি হাসপাতাল ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এবং বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ভ্যাকসিনেশন সেন্টারগুলো স্থাপিত হচ্ছে।